কিডনি স্টোন চিকিৎসা পদ্ধতি
কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিডনি স্টোনের চিকিৎসার প্রাথমিক উদ্দেশ্য, শরীর থেকে পাথর বের করে দেওয়া।
অনেকে এই চিকিৎসায় ওষুধ ব্যবহারের পক্ষপাতী। ওষুধ কিডনি স্টোনের ব্যথা ও সংক্রমণ কমাতে পারে, কিন্তু স্টোন তাড়াতে পারে না। অবশ্য খুব ছোট স্টোন হলে সাম্প্রতিক আবিস্কৃত কিছু ওষুধ(cap uromax:::tab ciprocin:::tab algin:::cap sergel) তাকে নিচে নামিয়ে দিতে সাহায্য করে।
অনেকে ভাবেন পানি খেয়ে কিডনি স্টোন সারিয়ে ফেলবেন। তাতে খুব বেশি হলে প্রস্রাবের পরিমান বাড়ে এবং ৫ মিমির কম ব্যাসার্দ্ধের স্টোন মূত্রের চাপে ইউরেটার বেরিয়ে আসে। তবে বড় স্টোনের সমস্যা কিন্তু থেকেই যায়।
তাই কিডনি স্টোনের সমস্যায় স্থায়ী সমাধান পেতে অস্ত্রোপচার সবচেয়ে ভাল উপায়।
আজকাল ছোট ফুটো করে কম সময়ে, কম খরচে, ১-২ দিন হাসপাতালে থেকে কিডনি স্টোন অপসারণ করা যায়।
ছোট পাথরের ক্ষেত্রে সাধারণত লিথোট্রিপসি ও বড় পাথরের ক্ষেত্রে পি সি এন এল (পারকিউটেনিয়াস নেফ্রো লিথোটমি) পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
লিথোট্রিপসি –
‘লিথোট্রিপসি’ শব্দটির অর্থ খণ্ড খণ্ড করা। এ কাজে লিথোট্রিপটর যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া হয়। ১ সেমি বা তারও চেয়ে ছোট স্টোনের জন্য এ পদ্ধতি আদর্শ। লিথোট্রিপসির প্রথম পর্যায়ে আইসোসেন্ট্রিক আলট্রাসাউন্ড ইমেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে স্টোনের স্থানীয়করণ (লোকালাইজেশন) করা হয়। তার পর নির্দিষ্ট অঞ্চল নির্ধারিত হলে যন্ত্রটির শক ওয়েভ থেরাপি হেড কাজ করতে শুরু করে এবং নিরবচ্ছিন্ন আলট্রাসাউন্ড নজরদারিতে স্টোনটি টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এই স্টোনের টুকরো বেশ কিছুদিন ধরে মূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে আসে।
ইউরেটেরোস্কোপি
- যদি ইউরেটারে বাই ল্যাটেরাল স্টোন হয়, অর্থাৎ দুটি ইউরেটারেই স্টোন থাকে তাহলে ইউরেটেরোস্কোপি (ইউ আর এস) করে পাথর দুটিকে গুড়ো করে দেওয়া হয়। এদের একটি ছোট ও একটি বড় স্টোন হতে পারে। আবার এমনও হয় যে দুটি স্টোনই বড় এবং তাদের সম্মিলিত বাধা সৃষ্টির কারণে কিডনি থেকে মূত্র ব্লাডারে যেতেই পারছে না। এর ফলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রোগীর রেনাল ফেলিওরের সমস্যা হবে। এই ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক অবস্থার বিচারে প্রথমে ডাবল জে (J) স্টেন্ট বসিয়ে মূত্র বেরনোর পথ প্রশস্ত করে দেওয়া হয়। অবস্থা নিয়ন্ত্রণে এলে সপ্তাহ তিনেক পরে স্টেন্ট খুলে দেওয়া হয়। তবে রোগীর যদি অন্য সমস্যা না থাকে, বয়স কম হয় তাহলে সরাসরি ইউ আর এস করে পাথর গুঁড়ো করার ব্যবস্থা করা হয়।
এই পদ্ধতিতে সুবিধা সমূহঃ
· অ্যানাস্থেশিয়া লাগেনা
· কোনও ক্ষত হয় না
· ব্যথা হয় না
· হাসপাতালে একদিনের সামান্য সময় কাটালেই হয়
· সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই
লিথোট্রিপসি হওয়ার পরে নিম্নলিখিত লক্ষন প্রকাশ পায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যেমন,
· লাগাতার ভীষণ ব্যথা
· খুব জ্বর
· প্রস্রাবে গন্ধ
· প্রস্রাব করার সময় জ্বালার অনুভুতি
· প্রস্রাব করতে অসুবিধে
· প্রস্রাবে রক্তের পরিমান বেড়ে যাওয়া
পি সি এন এল
(পারকিউটেনিয়াস নেফ্রো লিথোটমি)– এই পদ্ধতিতে অ্যানাস্থেশিয়া করে রোগীর পাঁজরের হাড় থেকে নিতম্বের হাড় পর্যন্ত যে কোনও অংশে কোনও কাটা ছেড়া না করে ত্বকের মধ্যে দিয়ে একটি ছোট ফুটোর সাহায্যে কিডনি পর্যন্ত পথ তৈরি করে নেওয়া হয়। সেই পথে এন্ডোস্কোপের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঢুকিয়ে কিডনি স্টোন ধ্বংস করা হয়। তার পরে স্টোনগুলিকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে একই পথে বের করে আনা হয়। পি সি এন এল এমন এক পদ্ধতি যেখানে ন্যুনতম রক্তপাত ও খুব কম সময়ের জন্য হাসপাতালে থাকার দরকার হয়। ভেঙে যাওয়া পাথর সরাতে সাধারণত নেফ্রোস্টোমি টিউব ব্যবহার করে পরবর্তী ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে অপসারণ পর্ব শেষ করা হয়।
গোটা অস্ত্রোপচারের জন্য ১-২ ঘন্টা সময় লাগে। যাঁরা অ্যাসপিরিন বা ক্লোপিডোগ্রেল জাতীয় ওষুধ খান অস্ত্রোপচারের পরে তাঁদের বেশি রক্তপাত হতে পারে। তাই যাঁর পি সি এন এল হবে তাঁর এই ধরনের ওষুধ খাওয়ার অভ্যেস থাকলে তা ইউরোলজিস্টকে জানানো দরকার। এ ছাড়া হার্টে কৃত্রিম ভালভ লাগানো থাকলে, করোনারি ধমনীতে স্টেন্ট লাগানো থাকলে ও কৃত্রিম জয়েন্ট থাকলেও সে কথা ইউরোলজিস্টকে জানাতে হবে।
এই পদ্ধতিটির সুবিধা সমূহঃ
· সম্পূর্ণভাবে স্টোন অপসারণ সম্ভব
· বড় শাখাপ্রশাখাযুক্ত কিংবা বিভিন্ন জায়গায় থাকা পাথরের জন্য কার্যকরী
· পাথরের টুকরো সরাতে প্রাকৃতিক উপায়ের দরকার হয় না
· দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যায়
পিসিএনএল নিম্ন লিখিত ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী যেমন,
· কিডনি স্টোনের আকার ২ সেমি (২০ মিমি)-র থেকেও বড় হলে পি সি এন এল করা হয়। তবে স্টোনের প্রকৃতি নরম হলে (যেমন, ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন) আরও বড় (৩ সেমি) আকারের স্টোনের ক্ষেত্রেও লিথোট্রিপসি চলতে পারে।
· সিস্টিন স্টোনের মতো কঠিন আকৃতির স্টোন থাকলে
· স্টোন কিডনি-ইউরেটারের সংযোগস্থলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করলে
স্টোন কিডনিতে নিম্ন মেরুর দিকে অবস্থান করলে
· সাংঘাতিক রকমের সংক্রমণ হলে
· সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রকৃতির স্ট্যাগ হর্ন স্টোন হলে
· ইনফান্ডিবুলার স্টোনোসিস, পেলভিক-ইউরেটরিক সংযোগস্থলে বাধার মতো মূত্র সংক্রান্ত অকার্যকারিতা দেখা দিলে
· ১.৫ সেমির চেয়ে বড় সিস্টিন ক্যালকুলি থাকলে
অস্ত্রোপচার-পরবর্তী সতর্কতাঃ
অস্ত্রোপচারের পরে পাথর চলে গেলেও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না কারণ, কিডনি স্টোন বারে বারে হয়। তাই যথাসাধ্য সুরক্ষা না নিলে ১০% ক্ষেত্রে প্রথম স্টোন হওয়ার ১ বছরের মধ্যে, ৩৩% ক্ষেত্রে প্রথম স্টোন হওয়ার ৫ বছরের মধ্যে এবং ৫০% ক্ষেত্রে প্রথম স্টোন হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে আবার স্টোন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে আবার স্টোন হওয়ার ঝুঁকি ব্যক্তি বিশেষে আলাদা হয়। যেমন, ১৫ বছর বয়স্ক কোনও রোগীর বংশগত কারণে সিস্টিন স্টোন হলে পুনরায় স্টোন হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। অথচ ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন হয়েছে এমন কোনও মধ্যবয়সীর পুনরায় স্টোন হওয়ার ঝুঁকি খুব কম। তাই ছ’মাস অন্তর সম্ভব না হলে অন্তত এক বছর অন্তর এক্স-রে ও সোনোগ্রাফি করে দেখে নিতে হবে, পাথর ফিরে এল কিনা। মনে রাখতে হবে, প্রথম অবস্থায় ধরা না পড়লে বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তা ছাড়া স্টোন সরানোর পরেও অনেক সময় সংক্রমণের অবেশেষ থাকে। তাই প্রস্রাব জীবানুমুক্ত কি না তা ইউরিন কালচার করে মাঝে মধ্যে দেখে নেওয়া দরকার।
সঠিক চিকিৎসা না নেওয়ার ক্ষতিকর দিকঃ
সঠিক চিকিৎসা না করালে কিডনি স্টোন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। যদি সেটি কিডনিতে থাকে তবে কিডনির ক্ষতি হয়, যদি সেখান থেকে বেরিয়ে ইউরেটারে ঢোকে তাহলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ইউরেটারের ওপর দিকে স্টোন থাকলে কিডনি থেকে মূত্র বেরিয়ে আসতে পারে না। ওদিকে কিডনি তার স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যেতে থাকলে যে বাড়তি মূত্র তৈরি হয়, তা বেরোবার পথ পায় না বলে কিডনি আপনা আপনি ফুলে যেতে থাকে। একে হাইড্রোনেফ্রোসিস বলে।
ব্যথা থাকুক বা না থাকুক সোনোগ্রাফিতে কিডনির হাইড্রোনেফ্রোসিস ধরা পড়বেই। তাতে দেখা যাবে, যে-কোনও এক দিকের কিডনি এবং/অথবা ইউরেটারের কোনও একটি অংশ ফুলে রয়েছে। এই ধরনের রিপোর্ট পেলে ইউরোলজিস্ট অনুমান করে নেন, ইউরেটারে বাধার কারণেই সমস্যাটি হচ্ছে। নিশ্চিত হতে সি টি স্ক্যানের সুপারিশ করা হয়। সি টি স্ক্যানে স্টোনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে, তবে আরও নিশ্চিত হতে ইউরেটেরোস্কোপি করা যেতে পারে।
জটিলতাঃ
যদি দেখা যায় দুটি ইউরেটারেই স্টোন আছে তবে সমস্যা জটিল হতে পারে। এটা ঠিক, যতক্ষণ স্টোন দুটি আংশিক বাধা দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত রোগীর প্রস্রাব বা অন্য সমস্যা হবে না। তবে বাধা বেশি হওয়ায় মূত্র মূত্রথলিতে জমা হতে না পারলে সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
আবার ইউরেটারের দু’দিকে পাথর শক্তভাবে আটকে থাকলে দু’দিকের কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। এতে রেনাল ফেলিওর হতে পারে, যার চিকিৎসা করা অত্যন্ত শক্ত। এর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হয়। এই রোগে বাড়তি সমস্যা সংক্রমণ। বাধা থাকুক বা নাই থাকুক, গোটা ইউরিনারি ট্রাক্টে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, অথবা সেপ্টিসেমিয়া হতে পারে। বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে কিডনি স্টোন থেকে মুক্তি তো দূরের কথা, সেপ্টিসেমিয়া সারানোই ঝুঁকির কাজ হয়ে যায়।
3 Comments
Is this available in BD?
ReplyDeleteKader beshi hoy?
ReplyDeletemiddle age
Delete