মাসিক বন্ধ/মেনোপজ: পূর্বপ্রস্তুতি, লক্ষণগুলি ও করনীয়।

 মাসিক বন্ধ/মেনোপজ: পূর্বপ্রস্তুতি, লক্ষণগুলি ও করনীয়। 







নারী জীবনের একটি স্বাভাবিক ঘটনা মাসিক চক্র।বয়োসন্ধির শুরু তে  মাসিক শুরু হয় এবং ৪৫-৫০ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। তারপর বিভিন্ন হরমোনের ঘাটতি দেখা দেয়। তার পরিনতি হিসেবে মাসিক বন্ধ/মেনোপজ হয়।


মধ্যবয়সী নারীর জীবনের এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মেনোপজ। এই বিশেষ সময়ের জন্য শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি থাকা জরুরি। মেনোপজের সময়টাতে মন খারাপ থাকা, অস্থিরতা কিংবা বিষণ্নতা এক অতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। 





মেনোপজের লক্ষণ::



নারীদের শরীরে এই পরিবর্তন আসার পেছনে মূল কারণ হরমোন। শরীরে বিশেষ একটি হরমোনের অভাবে মেনোপজের লক্ষণ দেখা দেয়। সাধারণভাবে মেনোপজের নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়—




    সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ হলো শরীর গরম হয়ে যাওয়া। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে আগুনের মতো গরম হল্কা বের হচ্ছে। এটার স্থায়িত্ব হয় খুব কম সময়। কিছুক্ষণ পর তাপমাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।


মনমরা ভাব দেখা দেয়। কোনো কারণ ছাড়া মন খারাপ হওয়া।


 রাতে শরীরে ঘাম হতে পারে। হাতের তালু ও পায়ের তালু জ্বালাপোড়া করা।


 এ সময় খুব অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠেন নারীরা। সব সময় যেন ক্লান্তি ভর করে শরীরে এমনটা মনে হয়।


   মাঝেমধ্যে রাতে ঘুম ভেঙে যেতে পারে। ঘুমের স্বল্পতা দেখা দেয়।


    ডিপ্রেশন বা মুড সুইং হয় ও অবসাদ দেখা দেয়। মনমেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে।



 যৌন মিলনে আগ্রহ কমে যায়।


  অস্থিরতা বা পালপিটিশন বেড়ে যায়।


   কথায় কথায় আবেগাপ্লুত হওয়া, কান্না পাওয়া ইত্যাদি।





মেনোপজের কারণ কী?


নারীদের শরীরে এই পরিবর্তন আসার পেছনে মূল কারণ ইস্ট্রোজেন নামের একটি হরমোন।

এই হরমোন নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য চক্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নারীদের ওভারি বা ডিম্বাশয়ে প্রতিমাসে যে ডিম্ব উৎপাদন হয় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নারীর শরীর যেভাবে প্রস্তুত হয় তার পেছনেও রয়েছে এই হরমোনের ভূমিকা।


কিন্তু বয়স হতে থাকলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন কমে যেতে থাকে। এই হরমোনই প্রজননের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।


তাই বয়স হতে থাকলে নারীদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বের পরিমাণও কমতে থাকে। পিরিয়ডের পরিমাণ কমতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়।


 

মেনোপজের প্রভাব:



মেনোপজের পর শরীর অদ্ভুত সব আচরণ শুরু করে। 

মেনোপজের সময় আকস্মিকভাবে আগুনের হল্কার মতন শরীরে গরম অনুভূত হওয়া, রাতের বেলায় ঘাম হওয়া, ঘুম না হওয়া, দুশ্চিন্তা হওয়া, মনমরা ভাব এবং যৌনতায় বা মিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার ঘটনা অতি সাধারণ।

এছাড়া মূত্রথলিতে সমস্যা এবং যোনিপথ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ঘটনাও খুব স্বাভাবিক।

আর ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন যখন শরীরে একেবার বন্ধ হয়ে যায় এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে নারীদের হাড় ও হৃদপিণ্ডের উপরে।

তবে যদি থেরাপির মাধ্যমে এই হরমোন প্রতিস্থাপন করা যায় এবং শরীরে এই ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ ঠিক রাখা যায় তাহলে শরীরে এর নেতিবাচক প্রভাব কিছু কমানো সম্ভব।


গরম লাগার কারণ::


ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাবে এরকম অনুভূতি হয়। এটি মানুষের ব্রেইন বা মস্তিষ্কের সাথে সম্পৃক্ত।

সাধারণত তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে শরীর সেটির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। কিন্তু যখন ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়, মানবদেহের থার্মোস্টেট বা তাপমাত্রা বোধের বিষয়টি এলোমেলো বা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে, অনেক সময় মস্তিষ্ক মনে করে শরীরে অতিমাত্রায় গরম লাগছে।



ইস্ট্রোজেন হরমোনের কারণে মানুষের মুড বা মেজাজের উপরেও প্রভাব পড়ে। এই হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে ও মনমরা ভাব হতে পারে।


এছাড়া ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাব ত্বকের উপরও প্রভাব ফেলে। ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং মনে হয় যেন ত্বকের নিচে পোকা-মাকড় হাঁটাহাঁটি করছে।


ইস্ট্রোজেন হরমোনের সাথে অন্য আরও হরমোন সম্পৃক্ত। যেমন প্রোজেস্টেরোন ও টেস্টোস্টেরোন। তবে, ইস্ট্রোজেন হরমোনের মতন এগুলোর প্রভাব এতোটা তীব্র নয়।



সাধারণত তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে শরীর সেটির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। কিন্তু যখন ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়, মানবদেহের থার্মোস্টেট বা তাপমাত্রা বোধের বিষয়টি এলোমেলো বা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে, অনেক সময় মস্তিষ্ক মনে করে শরীরে অতিমাত্রায় গরম লাগছে।




চিন্তিত হওয়ার কি কিছু আছে?


গাইনোকোলজিস্ট ও মেনোপজ বিশেষজ্ঞ দের মতে, মেনোপজ নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হবার কিছু নেই। মেনোপজের লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে আলাপ করলে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।


যে দিকে নজর রাখবেনঃ মেনোপজ হলে যদি নিচের বিষয়গুলো নারীরা খেয়াল করেন তাহলে সুস্বাস্থ্য পাওয়া সম্ভব।


* ব্যালেন্সড ডায়েট বা ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খাওয়া। চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়া। হৃৎপিণ্ড ও হাড়কে সুরক্ষা দিতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।


* দুশ্চিন্তা, চাপ ও হৃদরোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা।


* হার্টের অসুখ ও হঠাৎ গরম লাগা কমাতে ধূমপান ও অ্যালকোহল পান বন্ধ করা।


পাশে থাকুক পরিবার


মেনোপজের সময় একজন নারীর সবচেয়ে বেশি দরকার পারিবারিক সমর্থন। এ জন্য স্বামীকে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। স্বামী যদি স্ত্রীর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে বুঝে তাকে সাহায্য করেন, তাহলে মানসিক অস্থিরতা কম হবে। একসঙ্গে গল্প করা বা পছন্দের জায়গায় ঘুরতে যেতে হবে। এ সময় স্ত্রীর বন্ধুবান্ধবী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে বাসায় ঘরোয়া আড্ডার আয়োজন করতে পারেন। স্ত্রীকে তার শখের কাজে সম্পৃক্ত করে দিতে পারেন। বাগান করা, সেলাই, ছবি আঁকা বা লেখালেখির মতো সৃজনশীল কাজে যুক্ত হলেও সময় কাটবে বেশ। 



মেনোপজে কিছু ঔষধ::

১,, hormone replacement therapy.

2.calcium supplyment.

3.balanced diet with high protein.

4.anti depressent.

5.anti ulcerent.



Post a Comment

1 Comments