প্রস্টেট গ্রন্থি/বেনাইন এনলার্জমেন্ট অফ প্রস্টেট/প্রোস্টেট সমস্যার লক্ষণ/পরীক্ষা নিরীক্ষা/চিকিৎসা

 প্রস্টেট গ্রন্থির যত সমস্যা 





প্রস্টেট পুরুষদের ইন্টারনাল অর্গানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটা না থাকলে মানুষের জীবন শুধু ঝুঁকিপূর্ণ হয় তাই নয়, পুরুষের সুখময় দাম্পত্য জীবনে প্রোষ্টেট-এর রয়েছে এক অনবদ্য ভূমিকা। এই প্রস্টেট- এর নানা সমস্যা, নানা রোগ রয়েছে। বিশেষকরে চল্লিশোর্ধ পুরুষের বছরে অন্ততঃ একবার অন্যান্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি প্রস্টেট-পরীক্ষা করানো উচিত। প্রস্টেট গ্রন্থি বেড়ে গিয়ে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। প্রস্টেটের সমস্যাকে হালকা করে দেখা উচিৎ নয়। প্রস্টেট গ্রন্থির যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন। 





প্রস্টেট গ্রন্থি কি?


প্রস্টেট গ্রন্থি পুরুষের মূত্রথলির সামান্য নীচে অবস্থিত এক টুকরো মাংশপিন্ড যার মধ্যে দিয়ে মূত্র নালী গিয়েছে। এই গ্রন্থিটি বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায়। এই বৃদ্ধি কারও কারও ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃস্টি করে এবং কারও কারও ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা সৃস্টি করে না বা সামান্য অসুবিধা সৃস্টি করে। 




প্রোস্টেট সমস্যার লক্ষণ:


প্রস্টেট জনিত সমস্যা গুলোর মধ্যে রয়েছে 

=>ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বিশেষত রাত্রে। 

=>চিকন নালীতে প্রস্রাব হওয়া,

=>বেগ পেলে প্রস্রাব ধরে রাখতে কষ্ট হওয়া,

=> প্রস্রবের শেষে কিছু প্রস্রাব থলিতে রয়ে গেছে মনে হওয়া, 

=>প্রস্রাবের শেষে অনেকক্ষণ ধরে ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব ঝরতে থাকা এবং 

=>এক পর্যায়ে প্রস্রাব আটকে যাওয়। 



পরীক্ষা-নিরীক্ষা:


এই সব উপসর্গ থাকলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নিশ্চিত করতে হয়। সাধারণত যে সব পরীক্ষা করা হয় তা হলো প্রস্রাবের রুটিন, মাইক্রোসকপিক ও কালচার সেনটিভিটি পরীক্ষা, আল্ট্রাসোনোগ্রাম, কে, ইউ বি এক্সরে-ইউরোফ্লোমেট্রি, সিরাম পি.এস.এ সিসটোমেট্রাগ্রাম বা ইরোডাইনামিক ষ্ট্যাডি ইত্যাদি।




ডাক্তারি পরীক্ষা : 


ডাক্তার যদি মনে করেন যে আপনার প্রস্টেট সমস্যা থাকতে পারে তাহলে আপনার মধ্যে কি কি লক্ষণ দেখা গেছে সেগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। এর সাথে সাথে তিনি কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষাও করতে পারেন। সাধারণত যেসব ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয় সেগুলো হচ্ছে:



=>রক্ত পরীক্ষা, একে সাধারণত পিএসএ পরীক্ষা বলে


=>ডিআরই নামে এক ধরনের শরীর পরীক্ষা।


=>রক্ত এবং মুত্র পরীক্ষা।


=>ইউরোফ্লোমেট্রি বা মুত্রের প্রবাহ পরীক্ষা।


=>আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান। 

এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হবে যে আপনি ব্লাডার বা মুত্রথলি কতোটা খালি করতে পারছেন।



=>পিএসএ টেস্ট : 



প্রস্টেট গ্লান্ড থেকে পিএসএ নামে একধরনের আমিষ বা প্রোটিন তৈরি হয়, একে পিএসএ (প্রোস্টেট স্পেসিফিক এন্টিজেন)। রক্তে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পিএসএ থাকে। কিন্তু কোনো সমস্যা দেখা দিলে এই মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ৬০ বছরের একজন পুরুষের রক্তে পিএসএ-র স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৪। এর জন্য কম বয়সীদের রক্তে এর মাত্রা একটু কম, এবং বেশি বয়সীদের রক্তে এর মাত্রা একটু বেশি থাকে।



=>ডিআরই (ডিজিটাল রেক্টাম এক্সামিনেশন): 


পিএসএ টেস্ট করার পর সাধারণত এই পরীক্ষা করা হয়। মলদ্বার দিয়ে আঙ্গুল ঢুকিয়ে ডাক্তার প্রস্টেটের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন। প্রোস্টেটের ওপর কোন শক্ত জায়গা কিংবা প্রোস্টেটের আকার বড় হয়ে গেছে কিনা সেটাই তিনি বোঝার চেষ্টা করেন। এই পরীক্ষায় কোন ব্যথা অনুভূত হয় না। এই পরীক্ষার ব্যাপারে অনেকেরই বিব্রতভাব থাকলেও পরীক্ষাটার জন্য খুবই অল্প সময় লাগে।



=>রক্ত এবং মুত্র পরীক্ষা: 


মুত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ভেতরে সংক্রমনের কোন লক্ষন আছে কিনা সেটা নির্ধারন করার চেষ্টা করা হয়। সাধারণত পিএসএ পরীক্ষার আগে এই পরীক্ষাটা করা হয়। কারণ মুত্রের সংক্রমনের কারেনও অনেকসময় পিএসএ লেভেল বেড়ে যেতে পারে। এর সঙ্গে রক্ত পরীক্ষাও জরুরি। কারণ কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে কিনা সেটা তখন নিশ্চিত হওয়া যায়।



=>ইউরোফ্লোমেট্রি: 

এই পরীক্ষায় একটি যন্ত্রের ভেতরে আপনাকে প্রস্রাব করতে বলা হবে। যন্ত্রটি আপনার প্রস্রাবের গতি পরিমাপ করে। যদি আপনি খুব ধীর গতিতে প্রস্রাব করেন তার কারণ এমনও হতে পারে যে প্রস্টেট আপনার মুত্রনালীকে সংকুচিত করে ফেলেছে।



=>আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান: 

আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান থেকে ডাক্তার নিশ্চিত হতে পারেন যে প্রস্টেট আপনার মুত্রথলি বা মুত্রনালীকে আটকে আছে কিনা। প্রস্রাব করার পর মুত্রথলিতে প্রস্রাব রয়ে গেছে কিনা সেটাও বোঝা যায় এই পরীক্ষা থেকে।




চিকিৎসা:


প্রস্টেটের গ্রন্থির সমস্যার ক্ষেত্রে দুই ধরনের চিকিত্সা পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। 


=>একটি হলো ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে এবং 

=>অন্যটি হলো অপারেশন করে। 

অপারেশন আবার দুই প্রকার 

           #একটি প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে

          # অন্যটি পেট কেটে। 

কোন রোগী কোন পদ্ধতির জন্য উপযুক্ত তা চিকিত্সক নির্ধারণ করবেন। 




প্রস্টেটের ওষুধে চিকিৎসা:


 ক্ষেত্রে বিশেষে প্রস্টেট বৃদ্ধি জনিত উপসর্গসমূহ ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে উপশম লাভ করা যায়। সাদারণত দু'গ্রুপের ওষুধ প্রয়োগ করা যায়। এর এক গ্রুপ ওষুধ প্রস্টেটের মাংশপেশীসমূহ শিথিল করে প্রস্রাবের বাধা দূর করে। 


=>এদেরকে বলা হয় আলফা ব্লকার (a blocker)

      আলফা ব্লকারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বীর্যপাত         পিছনের দিকে মূত্র থলিতে হতে পারে।


 =>অন্য গ্রুপ হল প্রস্টেটের আকার ছোট করে। এই গ্রুপটি হরমোন মেনুপুলেশনের মাধ্যমে কাজ করে। এই গ্রুপের ওষুধ যদিও নিরাপদ তবুও কিছু ক্ষেত্রে পুরুষত্ব হানী করে। 




শল্য চিকিৎসা: 



TURP:


আধুনিক পদ্ধতিতে পেট না কেটে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে অপারেশন করা যায়, একে বলে TURP। এই পদ্ধতিটি বাংলাদেশের ইউরোলজিস্টরা সফলতার সাথে বিগত কয়েক দশক ধরে প্রয়োগ করে আসছেন। এই পদ্ধতিতে যন্ত্রের সাহায্যে সরাসরি প্রস্টেট এবং ইউরিনারি ব্লাডারের ভিতরের অংশ দেখা যায়। এর পর হাইফ্রিকোয়েন্সি কারেন্টের সাহায্যে প্রস্টেটকে চিপস আকারে কেটে বের কের আনা হয়।


সফল অস্ত্রপচারের ১০দিনের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে। ২-৬ সপ্তাহ ভারী ওজন তোলা, স্ত্রীর সাথে মেলা মেশা করা এবং ড্রাইভিং থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। 



 দীর্ঘদিন প্রস্টেট রোগে ভূগলে মূত্রথলির ভিতর পরিবর্তন আসে। মূত্র ত্যাগের পর অধিক পরিমাণ প্রস্রাব থলিতে জমা থাকলে মূত্র থলির সংকোচন ক্ষমতা কমে যেতে পারে বা কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে এমনকি কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সুতারাং এ ধরণের অসুখ নিয়ে অবিলম্বে চিকিত্সকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। 


রেট্রো পিউবিক:


পিউবিক অস্থির নিচ থেকে কেটে প্রস্টেট বের করে আনা হয়।

Post a Comment

1 Comments